দেশে যখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে তখন মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু পুলিশ কর্মবতার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকার ১২৭ জনের মধ্যে রয়েছে তিন থানার পাঁচ ওসিসহ ১৬ পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় ৭ জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাও।
এই তালিকা প্রকাশের পর এখন অনেকে সেই সব পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। এদের মধ্যে আছে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যুবক ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল। তিনি মাদকবিরোধী সংগঠন ‘মাদকমুক্ত ভৈরব চাই’ সংগঠনের আহ্বায়ক।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় তৎকালীন ভৈরব থানার ওসি (বর্তমানে আশুগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে কর্মরত) বদরুল আলম তালুকদার আমাকে হয়রানি করতে দুটি মাদক মামলা ও একটি হত্যার পুরাতন মামলায় মিথ্যা আসামি করে আমার জীবনটা তছনছ করে গেছে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আলোচনায় ওঠে আসে ওসি বদরুলের নাম।
ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল অভিযোগ করেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেন। দুই বছর ধরে এসব মিথ্যা মামলায় কিশোরগঞ্জ আদালতে আমি হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’
ওই যুবকের অভিযোগ, বদরুল ভৈরব থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। প্রতিটি স্পটের মাদক ব্যবসায়ীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই ব্যবসা করত।
ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল জানান, মাদকবিরোধী সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওসি বদরুলের কাছে আমি মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা গোপনে দিয়েছিলাম। তারপর একাধিক দিন বদরুল আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে আন্দোলন থেকে সরে যেতে বলেন। টাকার প্রস্তাব দেন। আমি তার অসৎ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ভৈরবে একটি কমিনিউটি পুলিশিং সভায় তৎকালীন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের উপস্থিতিতে পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ জনতার সামনে মাইকে বলেছিলাম। এসবের প্রতিবাদই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওসির অনুগত পুলিশের এসআই মো. নজমুল ৩০২ পিস ইয়াবা এবং এসআই অরুন কুমার বসাক ১০২ পিস ইয়াবা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। শুধু তাই নয় একটি পুরনো (পেইন্ডিং) হত্যা মামলায় আমাকে মিথ্যা আসামি দেখিয়ে এসআই নজমুলকে দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছেন। আমার জীবনে কোনো দিন আমি ধূমপান করেনি অথচ মাদক ও হত্যার মিথ্যা মামলায় আমাকে ৭ মাস ১০ দিন জেল খাটিয়েছেন। তিন মামলায় গত দুই বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে আমার জীবন আজ ধ্বংসের মুখে। ওসি বদরুল আমার সুখের জীবনটা শেষ করে দিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে তৎকালীন ভৈরব থানার (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার ওসি) ওসি বদরুলের কাজলের সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে দু’বারই পুলিশ মাদকসহ গ্রেফতার করে। ডিউটিরত পুলিশ তাকে মাদকসহ গ্রেফতার করে থানায় মামলা দেয়। এ ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার ছিল না। হত্যা মামলায় জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা ছিল বলেই তাকে মামলার আসামি করেছেন পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ওসি আরও বলেন, মাদকবিরোধী সংগঠন করে যদি কেউ মাদক ব্যবসা করে তবে তাকে গ্রেফতার করতেই হবে। তিনি বলেন, ভৈরব থানায় কর্মরত থেকে আমি মাদককে নির্মূল করতে না পারলেও অনেকটা কমিয়েছিলাম। কাজলের সব অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেন।
ভৈরব থানার বর্তমান ওসি মো. মোখলেছুর রহমান জানান, ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল নামের কোনো যুবককে আমি এখনও চিনি না। এ যুবক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা এমন প্রমাণ আমার কাছে নেই।
সূত্র: বিডিমর্নিং